অনান্যধর্ম

মা বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার নির্দেশ

User Rating: 4.35 ( 2 votes)

ডেস্ক রিপোর্ট: ছোট্ট বয়সে মা বাবাই আপন। একটু জ্বর হলে, শরীর একটু খারাপ হলে মা বাবার আর ঘুম থাকে না। সন্তানও মা বাবা ছাড়া কিছু বুঝে না। দুনিয়ার যত আবদার সব মা বাবার কাছে। ছোট্ট সন্তানের এক মাত্র স্বর্গ তখন মা বাবা। কিন্তু এই অসহায় সন্তান যখন সহায় হয়ে ওঠে। তখন সে আর মা বাবার, তাকে নিয়ে অতীতের কষ্টের কথা আর মনে রাখে না। এক সময় মা বাবাকে দূরে ঠেলে দিতেও দ্বিধা করে না।এসব মানুষদের বিষয়ে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সতর্কতা দিয়েছেন। আল্লাহ মা বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন- মা বাবা যদি তার সন্তানের ব্যবহারে কষ্ট পান তাহলে সেই সন্তানের ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহর প্রিয় নবীর অসংখ্যা হাদিসে মা বাবার প্রতি সদয় হওয়ার এমন অসংখ্যা নির্দেশনাও পাওয়া যায়।

সূরা লোকমানের ১৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “ওয়া ওয়াস্সাইনাল ইনসানা বেওয়ালেদাইহি হামালাতহু উম্মুহু ওয়াহনান আ’লা ওয়াহনিন ওয়া ফিসালুহু ফি আ’মাইনে আরিশ্কুরলি ওয়ালিওয়ালিদাইকা”।

অর্থাৎ, ‘আমি তো মানুষকে পিতামাতার প্রতি সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি। মা সন্তানকে অসীম কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে। সুতরাং, আমার প্রতি এবং পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।

সূরা নিসার ৩৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “ওয়া বুদুল্লাহা ওয়ালা তুশরিকু-বিহি শাইয়ান ওয়া বিল ওয়ালেদাইনে ইহসানান ওয়া বিজিল কুরবা ওয়াল ইয়াতামা ওয়াল মাসাকিনি ওয়াল জারেযিল কুরবা ওয়াল জারিল জুনুবি ওয়াস্সাহেবে বিল জাম্বে ওয়াবনিসসাবিল ওয়ামা মালাকাত আইমানুকুম”।

অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর প্রতি এবাদত করবে এবং কোনো কিছুকে তাঁর শরিক করবে না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথিক এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে।

আজকে আমরা যারা মুসলমান, তারা আল্লাহকে খুঁজি মসজিদের চার দেয়ালের মাঝে। আর আল্লাহ বলেছেন, আমাকে খুঁজে পাবে বাবা-মা’র সেবায় -এবং সেই সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, মুসাফির এবং দাস-দাসীদের প্রতি সদয় আচরণের মাঝে।

সবশেষ সূরা বনি ইসরাইলের ২৩ এবং ২৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “ওয়া ক্বাদা রাব্বুকা আল্লা তা’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু ওয়া বিল ওয়ালিদাইনে ইহসানা ইম্মা ইয়াবলুগান্না ই’নদাকাল কিবারা আহাদুহুমা আওকিলাহুমা ফালা তাকুল্লাহুমা উফ্ফিন ওয়ালা তানহারহুমা ওয়াকুল্লাহুমা ক্বাউলানকারিমা”।

অর্থাৎ তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারো এবাদত না করতে এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন বা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক উফ্ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিওনা। তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক নম্র কথা বলো।

এছাড়া, কোরআনের একটা কাব্যিক চরণে বলা হচ্ছে বাবা-মা’র প্রতি সন্তানের কী করণীয়-“ওয়াখফিজ লাহুমা জানাহাজ্ জুল্লি মিনার রাহমাতি ওয়া কুর রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়া-নি সাগিরা”।

অর্থাৎ, মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতায় চোখ অবনমিত করো এবং বলো-হে আমার প্রতিপালক তাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছেন।

সুতরাং, কোরআনের এ আয়াতগুলি থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বাবা-মা’র প্রতি মমতা এবং ভালোবাসার সঙ্গে আচরণের কী অসীম গুরুত্বইনা আরোপ করা হয়েছে। এর সঙ্গে রাসূল (সাঃ)ও পিতামাতার প্রতি সদ্বব্যহার করতে তাগিদ দিয়েছেন।

হযরত আবদুর রহমান বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত এ হাদিসে (বোখারী) বলা হচ্ছে, একবার এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন- হুজুর, আল্লাহকে ভালোবাসার জন্য আমাকে কী আমল করতে হবে?

রাসূল (সাঃ) বললেন, সময়মতো নামাজ আদায় কর।

লোকটি বললো -তারপর?

-বাবা-মা’র সঙ্গে উত্তম ব্যবহার কর।

-তারপর

-ধর্মকে রক্ষা করার জন্য জিহাদে অংশ গ্রহণ কর।

হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে বলা হচ্ছে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ এবং আখেরাতের উপর যারা ঈমান আনে তারা যেন বাবা-মা’র সেবা করে।

উল্লেখিত, কোরআনের আয়াত ও রাসূল (সাঃ) হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝতে পারি, আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে হলে প্রতিটি মানুষের উচিত পিতামাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন, পিতামাতার সেবা করার তাওফিক দিন, আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button